ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

কাঁকড়া এখন সোনার হরিণ : এক ঝুড়ির মূল্য লাখ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক ::  কাঁকড়া এখন সোনার হরিণ। চাষীরা এক ঝুড়ি কাঁকড়ায় বিক্রয় মূল্য পাচ্ছেন লাখ টাকারও বেশী। তাই কাঁকড়া ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন অনেক চিংড়ি চাষী। বর্তমানে ঢাকায় এক কেজি বড় কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকা। এতে কক্সবাজারে উৎপাদিত কাঁকড়ার চাহিদা আর্ন্তজাতিকভাবে বেশী বলে জানালেন রপ্তানীকারকরা।

মহেশখালী, টেকনাফ, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর, পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার বিভিন্ন চিংড়ি প্রজেক্টে মৌসুমী কাঁকড়া চাষ ছাড়াও নাফনদী, কোহেলিয়া নদী, সোনাদিয়ার মোহনা ও মহেশখালী চ্যানেল থেকে প্রচুর কাঁকড়া আহরণ করেন কাঁকড়া ব্যবসায়িরা। এছাড়াও জেলাব্যাপী অন্তত দেড় শতাধিক কাঁকড়া হ্যাচারী রয়েছে।

কাঁকড়া ব্যবসায়ি সমিতির কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক শান্তি লাল নন্দী জানিয়েছেন, কাঁকড়ার দর সন্তোষজনক। কাঁকড়ার দর বাড়ার সাথে সাথে প্রজেক্টের ইজরামূল্যও বেড়ে গেছে। এছাড়া বড় একটি কাঁকড়ার মূল্য হাজার টাকারও বেশী।
তাই লোভনীয় হওয়ায় প্রজেক্টে পাহারা দিতে হয় সার্বক্ষনিক। যে কেউ সুযোগ পেলেই ধরে নিয়ে আসে কাঁকড়া। বিক্রি করে পায় নগদ টাকা। বিগত সময়ে যে পদ্ধতিতে আমরা কাঁকড়া সরবরাহ করেছি এখন তা পরিবর্তন হয়েছে। এখন রপ্তানীকারকদের উপর নির্ভর করে কাঁকড়ার দর। যার ফলে ইচ্ছেমত দর দেওয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সরকার কাঁকড়া ব্যবসায়িদের ঋণ দিয়ে সহযোগীতা করলে কাঁকড়া উৎপাদন দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা আরো বেশী অর্জিত হবে। দেশে উৎপাদিত কাঁকড়া খাওয়ার সামর্থ স্থানীয়দের নেই। অনেকে সখ করেও কাঁকড়া খেতে পারছেন না। কক্সবাজারে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাঁকড়ার স্বাদই আলাদা।

তিনি আরো বলেন, কাঁকড়া ব্যবসা সমিতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র মহেশখালীতেই রয়েছে একটি নিবন্ধিত সমিতি। এই সমিতি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে উপকূলের অধিকাংশ ব্যবসা।

মহেশখালী কাঁকড়া উৎপাদন ও রপ্তানী বহুমুখী সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, সরকারি সহায়তা পেলে মহেশখালীতেই কয়েক হাজার কোটি টাকার কাঁকড়া উৎপাদন করা সম্ভব। অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ১২০ গ্রাম এর কম কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ হলেও এই সুযোগে স্থানীয় বনবিভাগ বড় কাঁকড়া আটকিয়ে টাকা দাবী করে। এটি এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এ বিষয়ে অভিযোগ করেও কোন সুরাহা হচ্ছে না। সরকার কাঁকড়া উৎপাদন বাড়াতে ঋণ দিলে আমরা উপকৃত হব।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ি দিলীপ কুমার শীল জানিয়েছেন, দাম বাড়ার কারণে ব্যবসায় প্রতিযোগীতা বেড়েছে। ঢাকা থেকে প্রেরিত ৫ আগষ্ট এর কাঁকড়ার দর জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডাবল এফ ওয়ান – প্রতিকেজি ৯৩০ টাকা, এফ ওয়ান -৭০০ টাকা, এফ টু- ৫৫০ টাকা, এফ ত্রি-৪৫০ টাকা, ডাবল এক্সেল প্রতিকেজি-৯৫০ টাকা, এক্সেল-৭০০ টাকা, এল-৫৫০ টাকা ও এসএম-৩০০ টাকা। ২৪ ঘন্টা আগেই এভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় কাঁকড়ার দর। আমাদের আর কোন দাবী নেই। শুধুমাত্র ঋণ দিয়ে সহযোগীতা করলে হ্যাচারী গড়ে তুলে কাঁকড়া উৎপাদন আরো বাড়াতে পারব।

ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলার ৬টি উপজেলায় অন্তত সাড়ে ৪ হাজার কাঁকড়া চাষী আছেন। প্রতি বছর চাষীর সংখ্যা বাড়ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, গত বছর জেলায় কাঁকড়া উৎপাদন হয়েছিল ৭০৫ মেট্রিক টন। এবার ৯০০ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখনো মৌসুম শেষ হয়নি। কাঁকড়া কক্সবাজার জেলার জন্য অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহন করে।

পাঠকের মতামত: